স্টাফ রিপোর্টার :
এক সময়ে মাঠ কাঁপানো বিএনপি নেতা ছিলেন মনিরুল আলম সেন্টু। চেয়ার টিকাতে রাতারাতি ভোল পাল্টে বনে গেছেন আওয়ামী লীগার। শত সমালোচনার মুখেও নৌকা কাধে তুলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়েছেন চেয়ারম্যান। লোক চক্ষুর আড়ালে হঠাৎ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া বিশেষ ওই নেতা নিজেকে শামীম ওসমানের একজন কর্মী হিসেবে দাবি করেছিলেন। অথচ, আলোচিত-সমালোচিত বিশেষ এই কর্মীকেই দেখা যায়নি শামীম ওসমানের কর্মীসভায়। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ টিপ্পনি কাটলেও অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত রোববার ১৩ মার্চ বিকেলে ফতুল্লার ইউনাইটেড ক্লাবে কর্মীসভা করেন শামীম ওসমান। সেখানে ফতুল্লা থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিলো। তবে ছিলেন না শামীম ওসমানের ওই বিশেষ কর্মী মনিরুল আলম সেন্টু। বুকে ক্ষোভ জমিয়ে রাখা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চোখ যেন সেন্টুকেই খুঁজে বেরিয়েছিল। কিন্তু কোথাও তাকে দেখা যায়নি। এসময় দর্শক সারিতে থাকা অনেককেই বলতে শোনা গেছে, রাতারাতি বড় আওয়ামী লীগার হয়ে চেয়ার টিকালেও আজ কর্মীসভায় তার খবর নেই।
বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা এই ব্যক্তিকে শামীম ওসমানের কর্মীসভায় দাওয়াত দেয়া হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমরা মনিরুল আলম সেন্টুকে কর্মীসভায় উপস্থিত হতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি আসতে পারেননি। সভার আগেই জানিয়েছেন যে তিনি নারায়ণগঞ্জের বাইরে রয়েছেন। এই জন্য আসতে পারবে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফতুল্লা থানা পর্যায়ের এক আওয়ামী লীগ নেতা দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘একজন আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে আমরা কখনই মনিরুল আলম সেন্টুকে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডে দেখিনি। তিনি বিএনপি থেকে এসেছেন। বিএনপি নেতা ছিলেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেলেও এর আগে এবং পরে তাকে দলের কর্মকাণ্ডে কখনই পাইনি। এমনকি সাংসদ শামীম ওসমান সাহেবের কর্মীসভাতেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।’
এদিকে, গত রোববার বিকেলে ফতুল্লার কর্মীসভায় হাইব্রিড প্রসঙ্গে কড়া বক্তব্য রেখেছেন বিভিন্ন পর্যায়েরে নেতাকর্মীরা। ‘বলেছেন নব্য আওয়ামী লীগার ও হাইব্রিডরা চারপাশে ঘিরে ধরলেও পরীক্ষিতদের ঠেলে দুরে সরানো হচ্ছে। ক্ষোভের এই বক্তব্য মনিরুল আলম সেন্টু ও সাংসদ শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করেই দেয়া হয়েছে কিনা- স্বাভাবিক ভাবেই সেই প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলকর্মীদের মাঝে।
এদিকে, সেন্টু চেয়ারম্যানের আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া এবং নৌকার মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছিল। তৎকালীণ সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘কুতুবপুরে স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থীদের যেই তালিকা দেয়া হয়েছিলো সেই তালিকা নিয়েই আমার আপত্তি ছিলো। তাই আমি স্বাক্ষর দেইনি। আর কুতুবপুরের মনিরুল আলম সেন্টু আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে কিনা, তা আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও অবগত নই। এটা আমার নলেজে নেই। যিনি কখনো আওয়ামী লীগ করেনি, তাকে কিভাবে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়, তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’ সেসময় নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে সেন্টু ইস্যুতে সমালোচনার ঝড় উঠে। তবে ওসমান বলয় ছিলো নিশ্চুপ। খবর শোনা যায়, মোটা অংকের টাকা ও দামি গাড়ি উপহারের মাধ্যমে এক সংসদ সদস্যের আশির্বাদ পায় মনিরুল আলম সেন্টু।